শবরিমালা মন্দিরে মারধরের শিকার মহিলা ফটোসাংবাদিক

প্রকাশঃ জানুয়ারি ৪, ২০১৯ সময়ঃ ৭:৪২ অপরাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ৭:৪২ অপরাহ্ণ

শবরীমালা মন্দিরে খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার এক ফটোসাংবাদিক

শবরীমালা মন্দিরে দুই নারীর প্রবেশের ঘটনায় উত্তাল ভারতের কেরালায় বিক্ষোভ ও সহিংসতার খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে মারধরের শিকার হয়েও অশ্রুসিক্ত চোখে নিজের দায়িত্ব পালন করে যাওয়া এক নারীর ছবি অনলাইনে ভাইরাল হয়েছে।

ছবিতে মালায়ালম ভাষার চ্যানেল ‘কাইরালি টেলিভিশন’র ক্যামেরাপারসন শাজিলা আব্দুল রেহমানকে ক্যামেরায় চোখ রেখে ভিডিও ধারণ চালিয়ে যেতে দেখা যায়, তার অন্য চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে।

গত বুধবার ভোরে শবরীমালা মন্দিরে ঋতুমতী দুই নারী প্রবেশের ঘটনায় কেরলার বিভিন্ন শহরে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

শতাব্দী প্রাচীন ভারতের এই মন্দিরটিতে প্রথম থেকেই ঋতুমতী (১০ থেকে ৫০ বছর বয়স্ক) নারীদের প্রবেশ নিষেধ।

যা নিয়ে নারীবাদী সংগঠনগুলোর দীর্ঘ আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত বছর ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক আদেশে ঐ নিষেধাজ্ঞাকে ‘অবৈধ’ অ্যাখ্যা দিয়ে তা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেন।

সুপ্রিম কোর্টের আদেশের পরও মন্দির কর্তৃপক্ষ ও ভক্ত-সমর্থকদের পাশাপাশি কট্টর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো নারীদের মন্দিরে প্রবেশে বাধা দেয়। এমনকি পুলিশ পাহারায় নারীরা সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন।

কিন্তু গত বুধবার ভোরে ৪০ বছরের বিন্দু আম্মিনি ও ৩৯ বছরের কনকা দুর্গা মন্দিরে ঢুকে ইতিহাস সৃষ্টি করেন। তারপরই রাজ্য জুড়ে শুরু হয় তুলকালাম।

বিন্দু ও কনকাকে মন্দির থেকে বের করে দিয়ে শুরু হয় ‘শুদ্ধিকরণ’। খবর পেয়ে উগ্রবাদী হিন্দুরা বিভিন্ন শহরের রাস্তায় নেমে ভাংচুর, বিক্ষোভ শুরু করে।
ঐদিন প্রাদেশিক রাজধানী থিরুভানান্থাপুরামে একটি ‘সঙ্গ পরিবারের’ বিক্ষোভের ছবি সংগ্রহ করতে সেখানে যান শাজিলা।

এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা তার উপর হামলা করে।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে শাজিলা বলেন, “কেউ একজন আমার পিঠে সজোরে লাথি মারে। বুঝতে পারিনি কোথা থেকে লাথি মারা হয়েছে। আমি ব্যথায় নিচু হয়ে পড়লে হামলাকারীরা আমার ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে সেটা আঁকড়ে ধরে থাকি। টানাছেঁড়ার কারনে আমি ঘাড়ে আঘাত পেয়েছি।”

আহত শাজিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সেখানে এনডিটিভিকে তিনি বলেন, “আমি ভয় পেয়ে কাঁদছিলাম না, বরং নিজেকে এত অসহায় লাগছিল যে আমি কান্না আটকাতে পারিনি।

“পাঁচ-ছয়জন লোক যখন পেছন থেকে এসে আমাকে আঘাত করে, ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে এবং ঠেলে মাটিতে ফেলে দেয় তখন আমার কী করার ছিল। আমি কিভাবে পাল্টা আঘাত করতাম? আমি কাঁদছিলাম কারণ, বুঝতে পারছিলাম গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তের ছবি আমি ভিডিও করতে পারছি না। যে কারণে আমি আবার ক্যামেরা তুলে নেই এবং সেটি চালু করে ভিডিও শুরু করি। আমি চাচ্ছিলাম না লোকজন আমার কষ্টের বিষয়টি বুঝতে পারুক। তাই আমি ক্যামেরার পেছনে মুখ লুকানোর চেষ্টা করছিলাম।”

‘সাহস ও পেশাদারিত্বের’ জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শাজিলা দারুণ প্রশংসিত হন।

বুধবার রাজ্যজুড়ে বিক্ষোভকারীদের ডাকা ১২ ঘণ্টার ‘বন্‌ধ’ এর মধ্যে সহিংসতায় অন্তত একজন নিহত হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে বিবিসি। সাংবাদিকসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

প্রতিক্ষণ/এডি/শাআ

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G